হজ-আল্লাহপাকের সঙ্গে বান্দার দ্বিতীয় সম্পর্ক হলো প্রেম ও ভালোবাসার

প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২২

হজ-আল্লাহপাকের সঙ্গে বান্দার দ্বিতীয় সম্পর্ক হলো প্রেম ও ভালোবাসার

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর সঙ্গে বান্দার দুই প্রকারের সম্পর্ক রয়েছে। প্রথমত, বিনয় এবং বন্দেগির সম্পর্ক। তার প্রকাশের মাধ্যম নামাজ। এই জন্যই নম্রতা এবং ভদ্রতার সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে বাদশাহী আদবের সঙ্গে কানে হাত রেখে আল্লাহর মহত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে তার দরবারে দাঁড়িয়ে যাওয়া। তারপর মাথা নত করে অবশেষে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আপন গোলামি ও বন্দেগির নিদর্শন দেখাতে হয়।

আল্লাহপাকের সঙ্গে বান্দার দ্বিতীয় সম্পর্ক হলো প্রেম ও ভালোবাসার। তিনি হলেন পরম দাতা ও দয়ালু। সৌন্দর্যের যত গুণাবলি আছে সবকিছুই তার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। মানুষের মাঝে স্বভাবজাত ছোটবেলা থেকেই প্রেম ও ভালোবাসা থাকে। আল্লাহপাক অনাদিকাল থেকেই চক্ষুর এক ইশারায় এই বিশ্বভুবনের বাজারে প্রেম ভালোবাসাকে সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছেন। এই ভালোবাসার চরম নিদর্শন পাওয়া যায় হজের সফরে। বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন ঘরবাড়ি ধন-সম্পদ সবকিছুর মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে প্রেমাস্পদের গলিতে বের হয়ে যাওয়া এবং তার তালাশে বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত এবং সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পাগলের মতো ঘোরাফেরা করাই প্রেমিকের কাজ।

ভালোবাসার মানুষ চাই প্রেমিকেরা পাগল বেশে তাকে পাওয়ার আশায় দারুণ আগ্রহ উদ্দীপনায় তার দরবারে ভিড় জমায়। তার জন্য তিনি হজের সফরকে একটা বাহানা স্বরূপ বানিয়েছেন। আর এই রূপ পাগলের মতো বের হয়ে কিছু না কিছু দুঃখ-কষ্ট এবং মুসিবতের সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক। হজের এই মোবারক সফর‌ই হলো এশক ও মোহাব্বতের সফর। কাজেই দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা-পেরেশান ও ভয়ভীতি সবকিছু হয় এক আনন্দের খোরাক।

ইহরাম বাঁধা হলো প্রকৃত প্রেমিক হওয়ার এক অপূর্ব নিদর্শন। না মাথায় টুপি, না শরীরে জামা, না সুন্দর পোশাক, না সুগন্ধি বরং ফকিরের বেশে পাগলের মতো সদা চঞ্চল ও উদাসীন অন্তরে সিলাইবিহীন গামছার মতো সাদা চাদরে সে কী এক অপরূপ দৃশ্য।

হজ কী?

৫ জায়গায় ৫ দিনে ৯ কাজ করাকে হজ বলে।

৫ জায়গা হলো– ১. মিনা ২. আরাফা ৩. মুজদালিফা ৪. জামারাত ও ৫. বাইতুল্লাহ।

৫ দিন হলো জিলহজ মাসের ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ তারিখ।

নয় কাজ হলো– তার মধ্যে ৩টি ফরজ, ৬টি ওয়াজিব।

ফরজ তিনটি: ১. ইহরাম ২. আরাফা ৩. তওয়াফে জিয়ারত।

ওয়াজিব ছয়টি হলো: ১. মুজদালফা ২. কঙ্কর ৩. কুরবানি ৪. মাথা মুণ্ডানো ৫. সাঈ ও ৬. বিদায়ী তওয়াফ।

হজের ফজিলত

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ করতে থাকো, একের পর এক হজ ও ওমরাহ করতে থাকো, এই হজ ও ওমরা তোমাদের পাপ মোচন করবে এবং অভাব‌ও মোচন করবে। (নাসায়ি শরিফ, হাদিস নং-২৬৩০)

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, যখন কেউ আল্লাহর উদ্দেশে গুনাহমুক্ত হজ করে সেই হজ থেকে ফিরে আসে, যেন মায়ের পেট থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের মতো নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ হয়ে ফিরে আসে। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-১৫২১)

সাধ্য থাকার পরও যদি হজ না করে তাহলে কী হবে?

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হজ ফরজ হওয়ার পরও বিনা কারণে (ওজর) হজ না করে যে মারা যায় সে ইহুদি হয়ে মারা যাক‌, না খ্রিষ্টান হয়ে মারা যাক তাতে আমার কোনও পরোয়া নেই। (দারেমি‌ শরিফ, হাদিস নং-১৭৮৫)

হজ না করে মারা যাওয়া লোকদের ব্যাপারে কত শক্ত মনোভাব নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলেছেন। এ থেকে বোঝা যায় হজ ফরজ হওয়ার পর হজ না করা কত বড় মারাত্মক গুনাহের কাজ।

হজের নিয়ত হতে হবে সম্পূর্ণ খালেস:

কোনোরকম মার্কেটিংয়ের নিয়ত, দেশ ঘুরার নিয়ত, বেড়ানোর নিয়ত রাখা যাবে না। নিয়ত হবে একমাত্র আল্লাহকে রাজি খুশি করা। হজ হতে হবে আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। আল্লাহপাক কোরআনে বলেন, যাদের সামর্থ্য আছে আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছা তাদের ওপরে হজ ফরজ। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৯৭)।

আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সহিহ শুদ্ধভাবে হজ পালন করার তৌফিক দান করেন।

লেখক: খতিব, পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ